বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত সাধু ছিলেন শ্রী শ্রী গণেশ পাগল। তিনি ১৮৪৮ সালে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার পোলসাইর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শিরোমণি এবং মাতা নারায়ণী দেবী উভয়েই শ্রী শ্রী নারায়ণ দেবের উপাসক ছিলেন। গণেশ পূজার দিনে জন্ম হওয়ায় তাঁর নাম রাখা হয় 'গণেশ'। পরবর্তীতে তিনি 'গণেশ পাগল' নামে পরিচিতি লাভ করেন। গণেশ পাগল ছিলেন একজন মহান কৃষ্ণভক্ত ও আধ্যাত্মিক সাধক। তাঁর জীবনে অসংখ্য অলৌকিক ঘটনা ও লীলার বর্ণনা পাওয়া যায়, যা ভক্তদের মধ্যে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে প্রচলিত। তাঁর প্রতিষ্ঠিত কদমবাড়ী সেবাশ্রম আজও ভক্তদের জন্য একটি তীর্থস্থান, যেখানে তাঁকে স্মরণ করে নানা আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়।
🕉️ সাধন-ভজন ও আধ্যাত্মিক জীবন
গণেশ পাগল কৈশোর থেকেই গুরু বিন্দু দাসের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে ভক্তি ও সেবার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক জীবনে প্রবেশ করেন। তিনি সর্বদা কৃষ্ণভক্তিতে নিমগ্ন থাকতেন এবং হরিনাম সংকীর্তন, ভাগবত পাঠ ও প্রসাদ বিতরণে নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন। তাঁর এই নিবেদিত সাধনা ও ভক্তির কারণে তিনি 'কেষ্ট খ্যাপা' নামেও পরিচিত ছিলেন।
🛕 কদমবাড়ী সেবাশ্রম
গণেশ পাগলের অনুসারীদের জন্য ১৯০৫ সালে মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ী দিঘীরপাড় এলাকায় প্রায় ৩৬৫ বিঘা জমিতে 'গণেশ পাগল সেবাশ্রম' প্রতিষ্ঠিত হয়। এই আশ্রমে ১০৮টি মন্দির রয়েছে, যার মধ্যে লক্ষ্মী নারায়ণ, দূর্গা, রাধা গোবিন্দ, গৌর নিতাই, রাম, হরি, অন্নপূর্ণা ও মনসা মন্দির উল্লেখযোগ্য।
🎉 কুম্ভমেলা
প্রায় ১৪০ বছর আগে ১৩ জন সাধু ১৩ কেজি চাল ও ১৩ টাকা নিয়ে ১৩ই জ্যৈষ্ঠ কদমবাড়ীতে কুম্ভমেলার আয়োজন করেন। এরপর থেকে প্রতি বছর এই দিনে মেলা অনুষ্ঠিত হয়, যা বর্তমানে উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ কুম্ভমেলা হিসেবে পরিগণিত। মেলায় দেশ-বিদেশের লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম ঘটে, এবং এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান।
🌟 মাহাত্ম্য ও প্রভাব
গণেশ পাগলের জীবন ও সাধনা মানুষের মধ্যে ভক্তি, সেবা ও আধ্যাত্মিকতার অনুপ্রেরণা জাগিয়েছে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সেবাশ্রম ও কুম্ভমেলা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান হিসেবে বিবেচিত। তাঁর লীলাময় জীবনের স্মৃতি আজও ভক্তদের মধ্যে জীবন্ত।