দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের সময় শ্রীকৃষ্ণের অসীম কৃপায় অশেষ বস্ত্র সরবরাহ হওয়া ছিল নিঃসন্দেহে অলৌকিক ঘটনা। কিন্তু সভায় উপস্থিত কারোরই বোধোদয় বা অন্তরে পরিবর্তন হল না—এটা সত্যিই একটি অদ্ভুত বিষয়। আসুন শাস্ত্র ও আচার্যগণের ব্যাখ্যা অনুযায়ী এর কারণগুলি দেখিঃ
কারণসমূহঃ
১️. পাপের ভারে বুদ্ধি অবরুদ্ধ হয়ে যায়
📖 ভগবদ্গীতা ২.৬৩
বুদ্ধিনাশাৎ প্রণশ্যতি।
অর্থাৎ, পাপ ও কামনায় বুদ্ধি নষ্ট হয়, বোধশক্তি মরে যায়।
সভায় কৌরব ও তাদের সমর্থকরা লোভ, অহংকার ও অধর্ম দ্বারা অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফলে এমন অলৌকিক ঘটনাও তাদের বোঝার ক্ষমতাকে স্পর্শ করতে পারেনি।
২️. কৃষ্ণকে না মানা - অহংকারের জয়
যারা শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর হিসেবে স্বীকার করে না, তাদের হৃদয়ে অহংকার ও অজ্ঞতা বাস করে। কৌরবরা শ্রীকৃষ্ণকে তাদের সমকক্ষ বা কেবলমাত্র পাণ্ডবদের বন্ধু ভাবত, পরমেশ্বররূপে নয়। তাই কৃষ্ণের কৃপাও তাদের মনে প্রভাব ফেলেনি।
৩️. অধর্মের পক্ষে থাকা - লোভ ও ভক্তির অভাব
যারা অধর্মের পক্ষে দাঁড়ায়, তাদের অন্তরে ভক্তি জাগে না। কেবলমাত্র অহিংসা, সত্য ও ভক্তি দ্বারা হৃদয়ে পরিবর্তন আসে।
📖 শ্রীমদ্ভাগবত ১.১৭.৩৮
যদন্বয়ো ধর্মপাদাঃ কল্পিতাঃ।
অর্থাৎ, অধর্মের পক্ষে দাঁড়ালে, ধর্মচ্যুতি ঘটে, হৃদয় কঠিন হয়।৪️. মায়ার প্রভাব
শ্রীকৃষ্ণের লীলা বোঝার জন্য শুদ্ধ চিত্ত প্রয়োজন। মায়ার প্রভাবে আচ্ছন্ন ব্যক্তিরা চাইলেও কৃষ্ণের অলৌকিকতা বুঝতে পারে না।
📖 ভগবদ্গীতা ৭.১৩মোহিতং নাবিজানাতি মম মায়াপরং ধন।
অর্থাৎ, মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে মানুষ কৃষ্ণকে চিনতে পারে না।
উপসংহারঃ
কৃষ্ণের অলৌকিকতা শুধু দর্শনের জন্য নয়, হৃদয় পরিবর্তনের জন্য।
কিন্তু যাদের হৃদয় অহংকার, লোভ ও পাপ দ্বারা আবদ্ধ, তাদের কাছে অলৌকিক ঘটনাও শুধুমাত্র একটি আশ্চর্য ঘটনা হয়ে থাকে, পরিবর্তনের কারণ হয় না।
সভার সবাই কৃষ্ণকে পরমেশ্বর বলে ভাবেনি, তাই কৃপা চোখের সামনে হলেও তারা অন্ধের মতোই রইল।